OC Salauddin ordered to fire 6(six) round bullet on the Leg of pedestrian Mahabub
ওসি সালাহ উদ্দিনের নির্দেশে পথচারী মাহবুবের পায়ে গুলি
গত সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার ঘটনা। মাহবুব কবির রিকশায় মিরপুর ২ নম্বর থেকে ১০ নম্বরের দিকে যাচ্ছিলেন। মিরপুর থানার অদূরে ঠিক ওই সময় একটি মিছিল বের করে হরতাল সমর্থকেরা। মিছিলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। এই দৃশ্য দেখে কবির রিকশা ঘুরিয়ে উল্টো দিকে রওয়ানা দেন। এ সময় অপর এক যুবক তার রিকশায় উঠে পড়েন। রিকশাটি কয়েকগজ দূরে যেতেই একটি মাইক্রোবাস সামনে থেকে রিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। তার সঙ্গী ওই যুবকটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বলেন, তিনি ছিলেন রিকশার বাঁ দিকে। আর ডান দিকে ছিলেন মাহবুব কবির। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা দুইজনই ছিটকে পড়েন রাস্তার ওপর। ওই তরুণ জানান, উঠে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন তারা দুইজনেই। এ সময় আরো একটি মাইক্রোবাস এসে ওই তরুণকে আবারো ধাক্কা মেরে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। ওই তরুণ জানান, ‘আমাকে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। কোনো মতে দেয়াল টপকে একটি বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ি’। তিনি বলেন, তখন ওই ব্যক্তিকে তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে দেখেন। অমনি, কয়েকজন পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে। কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পান তিনি। এরপর কী হয়েছে তা বলতে পারেননি। পড়ে টেলিভিশন চ্যানেলে দেখেছেন তার সঙ্গী ওই ব্যক্তিটিকে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। তার পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। তিনি শুনেছেন, পুলিশ ওই ব্যক্তির পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে। আহত মাহবুব কবির হাসপাতালে বলেছেন, তিনি যখন হোঁচট খেয়ে পড়েন তখনই পুলিশের কয়েকজন তাকে ঘিরে ধরে। কিছু বলার আগেই তার পায়ে গুলি করা হয়। এরপর কী হয়েছে তা মনে নেই তার। সজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। তিনি বলেন, ওই মিছিলে তিনি ছিলেন না। পুলিশ বিনা কারণে তার পায়ে গুলি করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই স্পটে মিরপুর থানার ওসি সালাহ উদ্দিন নিজেই ছিলেন। তার নির্দেশেই এসআই আসলাম ও এসআই হাসান এই গুলি করেছে। সালাহ উদ্দিনের নির্দেশেই তাকে ‘পশুর’ মতো টেনে হিঁচড়ে পুলিশের মাইক্রোবাসে তোলা হয়। সেখান থেকে প্রথমেই তাকে হাসপাতালে না নিয়ে নেয়া হয় থানায়। থানায় অবস্থার অবনতি হতে থাকলে পুলিশ তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে তার পা কেটে ফেলার জন্য পুলিশ ডাক্তারদের পরামর্শ দেয়। পঙ্গু হাসপাতালের ডাক্তারেরা পুলিশের কথা না শুনে দ্রুত তাকে হৃদরোগ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে নেয়ার পর ডাক্তারেরা বলে দেন পা আপতত কাটা লাগবে না। তবে অবস্থা মারাত্মক। উন্নত চিকিৎসা না হলে তার পা রাখা যাবে না। হাসপাতাল সূত্র জানায়, তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচের হাড় গুলির আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। রগগুলো টুকরো হয়ে গেছে। হৃদরোগ থেকে তাকে আবারো পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ হেফাজতে তার চিকিৎসা চলছে। তার স্বজনরা গতকাল পর্যন্ত তার সাথে দেখা করতে পারেননি।
এ দিকে ঘটনার পর ওসি সালাহ উদ্দিনসহ কয়েকজন পুলিশ মাহবুব কবিরের বাসায় যায়। পুলিশের দাবি কবিরের বাসা থেকে জামায়াতে ইসলামীর কিছু কাগজপত্র তারা পেয়েছে। পুলিশ ওই পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকিও দিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুলির ব্যাপারে যাতে মিডিয়াকে কিছু বলা না হয় সে ব্যাপারেও পুলিশ তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসে।
সামান্য বেতনের চাকরিজীবী মাহবুব কবির স্ত্রী এবং তিন বছরের এক ছেলেকে নিয়ে মিরপুরের পীরের বাগে বসবাস করে আসছেন। তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। তিনি জানান, কিভাবে স্বামীর চিকিৎসা করাবেন তা নিয়ে দিশেহারা। এতো টাকা কোথায় পাবেন। তদুপরি পরিবার এখন পুলিশি হয়রানির ভয়ে আছেন। এ ব্যাপারে মিরপুরের থানার ওসি সালাহ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। থানার ডিউটি অফিসার জানান, মাহবুব কবিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
Source: http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=143433